অরুপ তোমার কি দিপ্তীর কথা মনে আছে?
দিপ্তী তোমাকে ভালবাসতো, রঞ্জনকে এড়িয়ে চলতো
দিপ্তীর ঘনকালো চুলের গোছায় হাত রেখে তুমি বলতে
ভালোবাসার মানুষের সুগন্ধী চুলের গোছা এ রকমই ঘন হয়।
এসব কথা তুমিই আমাকে বলেছিলে, তোমার মুখ থেকে দিপ্তীর চুলের
প্রশংসা শুনে রঞ্জনের কেন জানি মনে হতো, তুমি একদিন দিপ্তীকে ছেড়ে
চলে যাবে দূরে বহু দূরে, তোমাকে কেউ পাবে না, তোমার সাথে কোন দিন পৃথিবীর মানুষের আর দেখা হবে না, শ্রাবণের বর্ষণের রাতে কদম ফুলেরা গন্ধ ছড়াবে তোমাদের বহু পুরনো ঘাট পারে, তোমাদের বাড়ীর ঘাট পারে বাতাস বয়ে যাবে কান্নার সুর তোলে তখন রঞ্জনের তোমার কথা কিংবা ধরো দিপ্তীর কথা মনে পড়বে।
অরুপ তোমার কি মনে আছে?
তুমি লজ্জায় লাল হয়ে আমাকে বলতে, দিপ্তী তোমার কাছে বসলে
তোমার মনে হতো, চারিদিকটা যেন কামিনী কিংবা হাসনাহেনার পাগল করা গন্ধে ভরে উঠে
রঞ্জনের তখন ঈর্ষা হতো, না ঈর্ষা না, এক ধরনের বিরুদ্ধ যন্ত্রনা রঞ্জনের মধ্যে দোলে উঠতো, রাগে ক্ষোভে বেদনায় বিষাদে ডুবে গিয়ে সে অন্য রকম হয়ে যেত, তখন রঞ্জন তোমাকে বলত
তোমার আর দিপ্তীর কথা তোমাদের মধ্যেই রাখো, তার কথা শুনে তুমি আগুন হয়ে বলতে আমার ভালোবাসার গল্প তোমাদের কাছেইতো করবো, আর কেউ কি আছে, আমাদের ভালোবাসার গল্প শুনার মতো সময়টুকু আমাকে দেবে, তোমার রাগ দেখে রঞ্জনও রেগে গিয়ে বলেছিল, প্রতিদিন তোমার দিপ্তীর কথা শুনে আমাদের কি হবে? আমরাতো জানি তোমার কাছে তোমার ভালোবাসা ছিল সময়ের কল্পনা মাত্র, এছাড়া আর কিছু নয়।
তারপরে একদিন দেখি রঞ্জনের কথাই ঠিক, তুমি একদিন দিপ্তীকে ছেড়ে চলে গেলে
কোন এক স্বপ্নের নগরে, যে নগরের ঠিকানা কেউ জানেনা।
অরুপ এখনো বর্ষায় কদম ফুটে তোমাদের পুরনো বাড়ীর পুরনো গাছে, তোমাদের ঘাট পাড়ের
কদম শাখায় যখন ফুলেরা ফুটে, তখন রঞ্জনেরও তোমার কথা, দিপ্তীর কথা মনে পড়ে।
রঞ্জন বলেছিল, শরতের আকাশ যখন দিপ্তীর কলেজের পোষাকের মত ঘন নীল হয়ে উঠে,তখন তার দিপ্তীর কথা মনে পড়ে পরম বেদনায় আর তোমার কথা মনে পড়ে জীবনের বিষন্ন বিকেলে
শীতের হাওয়ায় যখন গাছেরা তার পুরনো পাতা ঝরাতে থাকে, তখনও রঞ্জনের তোমর কথা ও দিপ্তীর কথা মনে পড়ে। বসন্ত বাতাসের ছোঁয়ায় কোকিলরা যখন কোনো গাছের শাখায় বসে নির্জণ দুপুরের সমস্ত নির্জনতাকে ভেঙ্গে গান গেয়ে উঠে, তখনও নাকি তার তোমার কথা আর দিপ্তীর কথা মনে পড়ে।
অরুপ তোমরা কি দুজন দুজনকে ভালোবেসেছিলে, নাকি ঘৃণা করেছিলে?
রঞ্জন বলেছিল, তার কেন জানি মনে হয় তোমরা দুজন দুজনকে কোনো দিন ভালোবাসনি।
তাই তোমরা দুজনই হারিয়ে গেলে পৃথিবীর সকল মানুষের কোলাহলময় জীবন থেকে।
অরুপ আজো আষাঢ় শ্রাবনে তোমাদের ঘাট পাড়ের গাছে ফোঁটা কদম ফুল গুলি
আমাকে আর রঞ্জনকে ডেকে বলে, তুমি কোথায়।
তোমার ভালোবাসা দিপ্তীর খোঁজে কদমের গন্ধে নির্জন দুপুরের বাতাস, তোমাদের ঘাট পাড়ের শুন্যতায় কেঁদে উঠে, রাত জাগা কোনো বিরহী পাখির মতো।
কবি: আইনজীবী, লেখক, গল্পকার
ব্রেকিংনিউজ/এমএইচ